ভাষা ও সাংস্কৃতিক ইতিহাস! বাংলা ভাষা এবং দেশের সাংস্কৃতিক ইতিহাস অবশ্যই সমৃদ্ধ। আধুনিক যুগের সূচনালগ্ন থেকে বাংলাকে যে হারে সংস্কৃত ভাষার কলোনি হিসেবে উপস্থাপনের চেষ্টা করা হয়েছে সেটা ইতিহাস বিকৃতির চেয়ে গুরুতর। কীজন্য? সংস্কৃত ভাষা বলতে আসলে কোনো ভাষাই ছিলো না খ্রিস্টপূর্ব ৫০০ অব্দের পূর্বে। প্রাচীন ভারতীয় আর্যভাষা যখন বিকৃত হয়ে যাচ্ছিলো তখন <a href="https://bn.m.wikipedia.org/wiki/%E0%A6%AA%E0%A6%BE%E0%A6%A3%E0%A6%BF%E0%A6%A8%E0%A6%BF">পাণিনির</a> হাত ধরে 'অষ্টাধ্যায়ী' গ্রন্থ রচিত হয়। মূলত, পাণিনির মাধ্যমেই এর সংস্কার সাধিত হয়। এজন্যই এই ভাষার নাম হয়ে যায় সংস্কৃত। এটাকেই ব্যাকরণের আদি বই হিসেবে ধরা হয়। (পাণিণি ছিলেন প্রাচীন ভারতের সংস্কৃত ভাষার একজন প্রথিতযশা বৈয়াকরণ। পন্ডিতবর্গের ধারনা পাণিণির সময়কাল ৭ম-৪র্থ খ্রিস্টপূর্ব। পাণিণি-ই সংস্কৃত ভাষার সমন্বিত ব্যাকরণ গ্রন্থ রচনা করেন সেই সময়। সংস্কৃত ছিল তৎকালীন সময়ে ভারতীয় আর্যদের ধর্ম ও সাহিত্যে ধ্রুপদী ভাষা; পাণিণিকে একাধারে সংস্কৃত ভাষার জনক ও প্রতিষ্ঠাতার মর্যাদা দেওয়া হয়।) কথা হচ্ছে, আর্যরা তো ভারতের স্থানীয় লোক ছিলো না। কিন্তু এরা এসে এখানকার সংস্কৃতিকে একদিকে যেমন বৈচিত্রময় করে তোলে, আরেকদিকে ভাষা ও বর্ণভিত্তিক বিভেদ / সন্ত্রাস সৃষ্টি করে। সেই বিভেদের রেশ ধরেই সংস্কৃত এলিটদের ভাষা হয়ে ওঠে অন্যদিকে অন্যান্য ভাষাগুলো তুলনামূলক দুর্বলদের প্রতিনিধিত্ব করতে থাকে। ভাষাভিত্তিক বৈষম্য মূলত বর্ণভিত্তিক বৈষম্যেরই আরেক নাম। সুতরাং, আধুনিক যুগের সূচনালগ্নে যেসমস্ত মহারথী বাংলাকে সংস্কৃতের কলোনি বানানোর চেষ্টা করেছেন তারা মূলত বর্ণভিত্তিক সন্ত্রাসেরই পৃষ্ঠপোষকতা করেছেন। আর বাংলা অঞ্চল ভারতবর্ষে অন্য যে কোনো অঞ্চলের চেয়ে তুলনামূলক আর্যপ্রভাব মুক্ত ছিলো। আর্যদের ভাষাভিত্তিক ও বর্ণভিত্তিক বৈষম্যই শেষপর্যন্ত সেমেটিকদের (মুসলিম) ভারতবর্ষে স্থায়িত্ব নিশ্চিত করেছে। এজন্য আর্যভাষা ঠিকই তার বিশুদ্ধতা বজায় রাখলেও তার গ্রহণযোগ্যতা হারিয়েছে। অন্যদিকে অনার্য ভাষাগুলো সেমেটিক ও অন্যান্য ভাষার বাঁকে মিশে আরও সমৃদ্ধ হয়েছে। আজকাল প্রতিবেশী রাষ্ট্রে ভাষাসন্ত্রাস উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। আমি বলবো যদি কোনো ভাষাকে বৈষম্যমূলক ও সন্ত্রাসী ধরতেই হয় তবে সেটা চোখ বুজে সংস্কৃত ভাষা। এরা বিশুদ্ধতা বজায় রাখার নামে যেমন বর্ণপ্রথার রেওয়াজ রেখেছে একইভাবে ভাষার ক্ষেত্রেও জাতপাত টেনে এনেছে। কিন্তু সেমেটিক বা অন্যান্য ভাষা থেকে বাংলায় আগত অপভ্রংশে আমরা সেটা দেখি না।